Toha
12.3K subscribers
389 photos
52 videos
1 file
101 links
Official Telegram Channel of Mozammel Hossain Toha
Download Telegram
ডেইলি স্টারের আমলনামা।
মাজার ভাঙা, পতিতা পেটানো-সহ বিভিন্ন বিচার বহির্ভূত ঘটনায় যারা মুখে কিছু না বললেও মনে মনে খুশি হচ্ছেন, তাদের জন্য ২০১৯ সালে লেখা এই স্ট্যাটাসটা রিপোস্ট করলাম:

২০১৩ সালে লিবিয়ার সিরতে আনসার আল-শারিয়া নামে এক বিশেষ বাহিনী আত্মপ্রকাশ করে।

প্রথম প্রথম তারা শুধুই মসজিদ কেন্দ্রিক দাওয়াতি কার্যক্রম চালাত। মানুষকে নামাজ পড়ার জন্য, সিগারেট না খাওয়ার জন্য, শরীয়া আইন চালুর পক্ষে অবস্থান নেয়ার জন্য আহ্বান জানাত, লিফলেট বিতরণ করত। কোনো রকম সহিংসতার সাথে তারা জড়াতো না।

ফলে সিরতের লিবিয়ানদের মধ্যে তাদের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। গাদ্দাফীর প্রপাগান্ডা মেশিনের দ্বারা প্রভাবিত লিবিয়ানরা এমনিতে ইসলামপন্থী সংগঠনগুলোকে খুব একটা পছন্দ করে না। কিন্তু তারপরেও স্থানীয় অনেক লিবিয়ান যুবক আনসার শারিয়ায় যোগ দিতে শুরু করে।

কিছুদিনের মধ্যেই আনসার শারিয়া অন্যান্য বাহিনীর লিডারদেরকে গুপ্তহত্যার মাধ্যমে দুর্বল করে নিজেরাই সিরতের সিকিউরিটির দায়িত্ব তুলে নেয়। ট্রাফিক পুলিশের পরিবর্তে আফগান স্টাইলের ড্রেস পরে, একে-৪৭ রাইফেল কাঁধে নিয়ে তারাই যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। রাস্তাঘাটে টহল দিতে শুরু করে।

শহরে চুরি-ছিনতাই বন্ধ হয়ে আসে। এর আগের অন্যান্য মিলিশিয়াদের তুলনায় অনেক সৎ হওয়ায় আনসারের জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে, পুলিশের অনুপস্থিতিতে মানুষজন এমনকি পারিবারিক সমস্যা মেটানোর জন্যও তাদের কাছে যেতে শুরু করে।

কিন্তু ২০১৪ সালের মাঝামাঝি থেকেই তাদের প্রকৃত রূপ প্রকাশিত হতে শুরু করে। কয়দিন পরপর রাতে তারা একেক জনকে তুলে নিয়ে যেতে থাকে, আর পরদিন সকালে তাদের চোখ বাঁধা লাশ পাওয়া যেতে থাকে শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে সাবাতাশের পরিত্যাক্ত কিলিং ফিল্ডে।

কিন্তু যেহেতু তারা কেবল চিহ্নিত ড্রাগস ব্যবসায়ী, ঘুষখোর বা লুটেরাদেরকেই হত্যা করত, তাই সিরতের লিবিয়ানরা তখনও তাদের পক্ষেই ছিল। তাদের লজিক ছিল, দেশে যেহেতু সরকার নাই, পুলিশ নাই, তাই আনসার শারিয়াই নাহয় অপরাধীদেরকে শাস্তি দেক! ক্ষতি কী?

ক্ষতিটা তাদের টের পেতে দেরি হয়নি। ২০১৪ সালের শেষ দিকে এই আনসার শারিয়া শহরের এক মিসরী খ্রিস্টান ডাক্তার পরিবারকে জবাই করে হত্যা করে। বেপর্দা চলাফেরা করা এক মেয়েকে জবাই করে সমুদ্রের পাড়ে লাশ ফেলে রাখে। এবং কয়েকমাস পরে যখন আইএসের ছোট একটা কনভয় শহরে প্রবেশ করে, তখন তারা আইএসকে সাদরে আমন্ত্রণ জানায় এবং আইএসের হাতে শহরের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেয়।

যেই সিরতের জনগণ একসময় আনসারের বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডে সমর্থন দিয়েছিল, সেই সিরতেই আনসারের সহায়তায় আইএস ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। সিরতের এক সালাফি শেখ আইএসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক দেয়ায় সিরতেরই অন্ত ২৩জন শেখকে আইএস হত্যা করে এবং রাস্তার মাঝখানে তাদের লাশ ঝুলিয়ে রাখে।

অনেক পরে, আইএসকে যুদ্ধে পরাজিত করার পর সরকারি বাহিনীর হাতে তাদের হাজার দেড়েক সদস্যের পাশাপাশি বেশ কিছু টপ লিডারও জীবিত গ্রেপ্তার হয়। সরকার বেশ কিছু টিভি সাংবাদিককে তাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার সুযোগ দেয়।

সেরকম এক সাক্ষাৎকারে আনসারের একট টপ লিডারের বক্তব্য থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের মাঝামাঝিতে সিরতের মানুষ যখন তাদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডগুলোতে খুশি হয়ে নিশ্চিন্তে দিন কাটাচ্ছিল, তখনই সে সহ আনসারের তিনজন নেতা তুরস্ক হয়ে বর্ডার পাড়ি দিয়ে সিরিয়াতে গিয়ে আইএসের লীডারদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে এসেছিল।

যে বহির্ভূত হত্যাকান্ডগুলোকে সিরতের জনগণ সমর্থন করেছিল, সেগুলো ইনফ্যাক্ট আইএসকেই আরো শক্তিশালী করে তুলেছিল।
৫ আগস্টের পর থেকে একটা জিনিস নিয়ে মনের মধ্যে খচখচানি রয়েই গিয়েছিল। সেটা হচ্ছে, সেনাপ্রধান মিডিয়ার সামনে এসে প্রথমেই জামায়াতের আমিরের নাম উচ্চারণ করেছিলেন কেন?

এবং অফিশিয়ালি জামায়াত তো তখনও নিষিদ্ধ একটা দল! তিনি যদি জামায়াতকে ছাড়াই প্রথমদিনের মিটিং শেষ করতেন, এরপর সবার সাথে আলোচনা করে নিষেধাজ্ঞা উইথড্র করার সিদ্ধান্ত নিতেন, তাহলেও কারও কিছু বলার ছিল না। সেটা না করে প্রথম দিনেই তিনি জামায়াতের আমিরকে কেন ডাকলেন? তাও আবার জামায়াতের আমির এসে পৌঁছানোর জন্য মিটিং শুরু করতে এক ঘণ্টা লেট করলেন?

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই এর পেছনে এক ধরনের কন্সপিরেসি দেখতে পেয়েছিলেন যে সেনাবাহিনী হয়তো বিশ্বের সামনে প্রমাণ করতে চাইছে, বিপ্লবের পর উগ্র ইসলামপন্থীরা বা জামাত ক্ষমতায় চলে আসছে। মিনিমাম প্রমাণ ছাড়া কন্সপিরেসি থিওরি বিশ্বাস করার ব্যাপারে আমার অনীহার কুখ্যাতি আছে ফেসবুকে। কাজেই এই থিওরিও আমাকে খুব একটা আকৃষ্ট করতে পারেনি।

দ্বিতীয় যে ব্যাখ্যাটা আমি কয়েকজনের সাথে আলোচনায় পেয়েছিলাম, জামায়াত সমর্থকদের কাছ থেকে তো বটেই, দুই-একজন "সেক্যুলার" সাংবাদিকের কাছ থেকেও, সেটাই বরং আমার কাছে কিছুটা যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছিল। যদিও যথাযথ প্রমাণের অভাবে পুরোপুরি শিওর হতে পারছিলাম না। ফলে খচখচানিটা রয়েই গিয়েছিল।

গত দুইদিনের ঘটনাবলি দেখে মনে হচ্ছে, সম্ভবত দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটাই সঠিক। সেটা হচ্ছে, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আন্দোলন দমন করতে ব্যর্থ হয়েছিল ঠিকই, পেছনের কারিগরদেরকে ধরতেও ব্যর্থ হয়েছিল; কিন্তু তারা ঠিকই বুঝতে পেরেছিল যে পেছন থেকে এই আন্দোলনে জামায়াত-শিবির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে খুব বেশি অথর্ব ভাবার কোনো কারণ নাই। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের বড় বড় অঘটনের পর দেখা যায়, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর রিপোর্ট ঠিকই ছিল, কিন্তু পলিটিক্যাল লিডারশিপ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

বাস্তবে এই আন্দোলনে অন্য সবগুলো পক্ষের তুলনায় শিবিরের অবদান মোট অবদানের কত শতাংশ, সেটা অপ্রয়োজনীয় আলোচনা। হয়তো সেটা কমই ছিল। কিন্তু তারপরেও যেহেতু বাকি সবার ভূমিকা মোটামুটি প্রকাশ্য বা বিএনপির ক্ষেত্রে ওপেন সিক্রেট ছিল, একমাত্র জামায়াত-শিবিরের ভূমিকাই সবচেয়ে সিক্রেট ছিল, তাই সরকারের পক্ষে সেটা নিয়েই বেশি আশঙ্কা থাকা অস্বাভাবিক না।

কাজেই এটা ভাবা অযৌক্তিক হবে না যে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর রিপোর্টে, বিশেষত সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে একেবারে শেষ দিনগুলোতে জামায়াত-শিবিরের গোপন ভূমিকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এবং সেনাপ্রধান হিসেবে ওয়াকার সাহেবের সেটা ভালোভাবেই জানা ছিল। ফলে প্রথমদিনেই তিনি পরিস্থিতি শান্ত করার লক্ষ্যে আন্দোলনের পেছনের অন্যতম এই প্লেয়ারদেরকে ইনক্লুড করাটা জরুরী মনে করেছিলেন।
অনেকে দেখলাম শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের সিলেবাস শেয়ার করছে। কুরআন-হাদিস-ফিকহ সংক্রান্ত সিরিয়াস সিরিয়াস বই। লিস্ট দেখেই সবাই ভড়কে যাচ্ছে।

আপনাদেরকে আশ্বাস্ত করার জন্য বলতে চাই, এগুলো হচ্ছে অফিশিয়াল লিস্ট। বাস্তবে শিবির শুধু এত রসকষহীন বই পড়ে না। রসময় বইও পড়ে। অফিশিয়াল লিস্টের বাইরে তাদের কাছে আন-অফিশিয়াল লিস্টের বইও থাকে, এবং "সিলেবাসের বাইরে"র ওসব বইও তারা বেশ আগ্রহের সাথে প্রচার করে।

২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত সরকার যখন ক্ষমতায়, তখন লিবিয়াতেও তাদের একটা শাখা গজিয়ে উঠেছিল। বেশ অ্যাক্টিভ ছিল তারা। প্রতি সপ্তায় নিয়ম করে তাদের "বৈঠক" অনুষ্ঠিত হতো। বছরে একবার সমগ্র লিবিয়া থেকে প্রতিনিধিরা একত্রিত হতো এবং লিবিয়া শাখার আমির নির্বাচিত করত।

প্রতি সপ্তায় তাদের কাছে "সোনার বাংলা" পত্রিকার কপি আসত। সিলেবাসের বিভিন্ন বইও আসত। সেই সাথে আসত "সিলেবাসের বাইরে"র দুই-একটা বইও।

লিবিয়ায় বাংলাদেশী কমিউনিটি খুবই ছোট হওয়ায় জামায়াতের এই সদস্যদের প্রায় সবার সাথেই আমাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। এমনকি জামায়াতের লিবিয়া শাখার যে আমির, উনি কিছুদিন আমাদের প্রতিবেশীও ছিলেন।

তো সেই সময়ই তাদের বাসা থেকে কৌতুহল বশত কয়েকটা বই নিয়ে পড়েছিলাম। দুই-একটা ছিল গোলাম আযমের লেখা চটি বই। নেগেটিভ অর্থে না; ক্ষুদ্র পুস্তিকা অর্থে। একটা সম্ভবত ছিল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব সংক্রান্ত। মনে নাই পুরোপুরি। তবে পড়তে খারাপ লাগেনি। এছাড়াও মওদুদীর তাফহীমুল কুরআনের (ওটাও যতদূর মনে পড়ে গোলাম আযমেরই অনুবাদ) একটা খণ্ডও কিছুদূর পড়েছিলাম।

তো ওগুলো তো হচ্ছে সিলেবাসের বই। এছাড়াও সিলেবাসের বাইরের একটা বইও তাদের কাছে পেয়েছিলাম। নামটা দেখেই খুব আকৃষ্ট হয়েছিলাম। এবং সাথে সাথেই নিয়ে পড়ে ফেলেছিলাম। বইটা হচ্ছে ... সাসপেন্স মিউজিক ... মতিউর রহমান রেন্টুর "আমার ফাঁসি চাই" 😂

সেজন্যই বলছি, যারা সিরিয়াস সিরিয়াস বইয়ের নাম দেখে ভয় পেয়ে শিবিরে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন, তাদেরকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, ভয় পাবেন না। শিবিরে যোগ দিলে কঠিন কঠিন বইয়ের পাশাপাশি এরকম গোপন, নিষিদ্ধ এবং রসালো বইও আপনি পড়ার সুযোগ পাবেন।

এই আমাকেই দেখেন। যেই বই ২০২৪ সালে ভাইরাল, জাস্ট স্থানীয় জামায়াত আমিরের প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে ২০০৪ সালেই সেই বই পড়ে কীভাবে আমি জীবনযুদ্ধে এগিয়ে গেলাম!

অতএব, আজই শিবিরে যোগদান করুন এবং জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যান।

মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা,
আন্ডারকভার এজেন্ট,
মোসাদ শাখা,
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
আপনারা যারা পোস্টে রিচ পাচ্ছেন না, লাইক্কমেন্ট পাচ্ছেন না, তাদের জন্য একটা টিপস দেই:

জামায়াত-শিবির নিয়ে পোস্ট দিন, কমেন্ট করুন। লাইক্কমেন্ট হুহু করে বেড়ে যাবে। আমি পরীক্ষা করে দেখেছিলাম। ১০০% ইফেক্টিভ। বিফলে লাইক্কমেন্ট ফেরত।

অনলাইনে জামায়াত-শিবির সমর্থকরা সহজ-সরল-আমানতদার টাইপের মানুষ। কেউ একটু প্রশংসা করে স্ট্যাটাস দিলেই এরা গলে যায়। সমানে পাল্টা প্রশংসা করে। নিজেদের আপন ভাই মনে করে।

তবে এরপর কখনও আবার একটু সমালোচনা করলেই দলবদ্ধভাবে গালাগালি করে সেই লাইক্কমেন্টের আমানত শোধ করে দেয়। কাজেই এ ব্যাপারে আপনাকে সাবধান থাকতে হবে।

বেসিক্যালি, আপনি যদি গালাগালি না খেয়েই ননস্টপ লাইক্কমেন্ট পেতে চান, তাহলে আপনাকে ওয়ান্স এ রাজা ... স্যরি, আই মীন, ওয়ান্স এ জামায়াত-শিবিরের প্রশংসাকারী, অলওয়েজ জামায়াত-শিবিরের প্রশংসাকারী হতে হবে।

আর যদি গালাগালির তোয়াক্কা না করেন, তাহলে পজিটিভ-নেগেটিভের ধার ধারা লাগবে না। জাস্ট স্ট্যাটাসের মধ্যে "জামাত-শিবির" শব্দগুলো থাকলেই হবে। তাহলেই সমানে লাইক্কমেন্ট পেতে থাকবেন। (অবশ্য হাহাও পেতে পারেন। ইট ডিপেন্ডস। তবে কমেন্ট নিশ্চিত। বিফলে কমেন্ট ফেরত।)

বিপক্ষে লিখলেও কেন লাইক/হাহা-কমেন্ট বেশি পাবেন? কারণ, মানুষ মূলত শিবির। অনলাইনে যারা সবচেয়ে বেশি জামায়াত-শিবির-বিরোধী, যেমন ধরেন নিঝুম মজুমদার, তাদেরও ৯০% লাইক্কমেন্ট এদের কাছ থেকেই আসে। মাফ নাই।

টিপস দেওয়া দরকার ছিল, দিলাম, এখন দেখেন আপনারা যা ভালো মনে করেন ...
গাযাবাসীকে কিছুটা রিলিফ দেওয়ার জন্য ফিলিস্তিনের বাইরে সর্বোচ্চ ত্যাগটা শেষ পর্যন্ত ইরানই স্বীকার করল।

হাসান নাসরাল্লাহ শুধুমাত্র লেবানিজ মিলিশিয়া লিডার ছিলেন না, শুধুমাত্র হেজবুল্লাহ প্রধান ছিলেন না; একইসাথে তিনি ছিলেন ইরানের সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ। ইরান দশকের পর দশকের ধরে অস্ত্রশস্ত্র এবং ট্রেনিং দিয়ে নাসরাল্লাহকে এবং তার হেজবুল্লাহকে তৈরি করেছে নিজের প্রধান রক্ষাকবচ হিসেবে। যেন আমেরিকা বা ইসরায়েল কখনও তাদের উপর আক্রমণ করার সাহস না করে।

সেই হেজবুল্লাহর প্রধান নেতাসহ উপরের দিকের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতার মৃত্যু তাই হেজবুল্লাহর জন্য তো বটেই, ইরানের জন্যও অপূরণীয় ক্ষতি।

হেজবুল্লাহ কেন পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধে জড়াচ্ছিল না, এটা বিভিন্ন সময় বলেছি। হেজবুল্লাহর সেই সক্ষমতা নাই। ইনফ্যাক্ট কারোই নাই। হামাসেরও ছিল না। এবং সে কারণে হামাসও চায়নি ইসরায়েলের সাথে "পূর্ণমাত্রায়" যুদ্ধ শুরু করতে। তাদের লিমিটেড অপারেশনের পরিকল্পনা ছিল। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বসে পড়ায় সব হিসেব-নিকেশ পাল্টে যায়।

ফলাফল? গাযায় অফিশিয়ালি ৪১ হাজার, আনঅফিশিয়াল লাখ দেড়েক মানুষের মৃত্যু, গাযার অর্ধেক ইনফ্রাস্ট্রাকচার পুরোপুরি ধ্বংস, এবং চারদিক থেকে আবদ্ধ থাকার পরেও লাখ তিন-চারেক মানুষের গাযা ত্যাগ। শুধুমাত্র মিসর বর্ডার ওপেন করেনি বলে; তা না হলে গাযায় যোদ্ধারা ছাড়া আর কোনো সাধারণ মানুষ থাকতে পারত না।

হেজবুল্লাহ যে পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরু করেনি, তার একটা কারণ, তারা নিজেদের এই পরিণতি চায়নি। হ্যাঁ, হামাসও ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করতে পারছে, হেজবুল্লাহ হয়তো আরও বেশিই পারত; কিন্তু ইসরায়েলকে "পুরোপুরি পরাজিত" করতে পারত কি? অন্তত এই মুহূর্তে পারত বলে মনে হয় না। এরকম পরিস্থিতিতে নিজেদের লাখ লাখ জনগণের মৃত্যু ডেকে আনা হেজবুল্লাহর জন্য লজিকাল অবস্থান না।

আরও দুইটা সমীকরণও এখানে আছে। প্রথমত, লেবাননে হেজবুল্লাহর দারুণ জনপ্রিয়তা আছে। কিন্তু সেটা এই কারণে যে হেজবুল্লাহ লেবাননের মাটিকে ইসরায়েলের হাত থেকে রক্ষা করেছে। কিন্তু ফিলিস্তিনের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে লেবাননের সাধারণ জনগণ কি রাজি আছে? বিভিন্ন সময় সাক্ষাত্‍কার দেখে সেরকম মনে হয়নি।

ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের সমর্থন আছে, সহানুভূতি আছে, কিন্তু তাদের নিজেদেরই অর্থনৈতিক সঙ্কটে জীবন পর্যুদস্ত। সেখানে অন্য একটা দেশের জন্য নিজেদের মৃত্যু ডেকে আনার পক্ষপাতী যদি তারা না হয়, তাদেরকে খুব একটা দোষ দেওয়া যায় না।

দ্বিতীয়ত, ইরানের হিসেব-নিকেশ। গাযাবাসীর জন্য যুদ্ধ করতে গিয়েই যদি হেজবুল্লাহ ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে ইরানের উপর আক্রমণ হলে তাকে রক্ষা করবে কে?

সেজন্যই সরাসরি পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধে জড়ানো হেজবুল্লাহর জন্য কখনোই লজিকাল ছিল না। কিন্তু সরাসরি যুদ্ধে না জড়িয়েই যতটুকু করা সম্ভব, তার সর্বোচ্চটা তারা করেছে। নিয়মিত বিরতিতে নিজেদের যোদ্ধাদের প্রাণের বিনিময়ে ইসরায়েলের বর্ডার স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করে গেছে। তাদের সীমান্তের সেটলমেন্টগুলোর অন্তত ৩০,০০০ বাসিন্দাকে প্রায় স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করেছে। বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেছে।

এগুলো সবাই তারা করেছে নিজেদের উপর যেকোনো সময় আক্রমণ শুরু হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই। এবং শেষপর্যন্ত সেটাই হয়েছে।

এই যুদ্ধের ভবিষ্যত কী? জানি না। হেজবুল্লাহ এই মুহূর্তে কতটুকু পাল্টা আক্রমণ করতে পারবে, নিশ্চিত না। তাদের এত বেশি টপ কমান্ডার মারা গেছে, গুছিয়ে উঠতে বেশ সময় লাগার কথা। আমার ধারণা পাল্টা আক্রমণ - সেটা যতটকুই হোক - হেজবুল্লাহর কাছ থেকে আসা সম্ভব না। সেটা আসবে ইরাক, সিরিয়া, এবং সবচেয়ে বেশি হুথিদের কাছ থেকে। মোস্ট প্রবাবলি হুথিরাই হবে আগামী দিনের হেজবুল্লাহ।

নাসরাল্লাহ ফেরেশতা ছিলেন না। দুনিয়ার কেউই ফেরেশতা না। সিরিয়া যুদ্ধে নাসরাল্লাহর এবং তার বাহিনী হেজবুল্লাহর হাতে প্রচুর নিরাপরাধ মানুষের রক্ত আছে। কিন্তু সবকিছুর পরেও হাসান নাসরাল্লাহই এই যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদেরকে একটুখানি রিলিফ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। পুরোপুরি যুদ্ধে না জড়ানোর সর্বশেষ সীমানায় দাঁড়িয়ে ইসরায়েলের উপর আক্রমণ করে গেছেন।

আল্লাহ সাইয়্যেদ হাসান নাসরাল্লাহর সকল অপরাধ ক্ষমা করে তাকে শহিদ হিসেবে কবুল করে নিক।
বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের উচিত রিঅ্যাক্টিভ না হয়ে প্রো-অ্যাক্টিভ হওয়ার চেষ্টা করা। এবং একইসাথে "ইনক্লুসিভ" হওয়া। নাহ, LG TV বিষয়কইনক্লুসিভনেস না; ডান-বাম, "হুজুর"-"প্রগতিশীল" টাইপ ইনক্লুসিভনেস।

৫ আগস্টের পর থেকে অনেকে অনেক ধরনের সংগঠন গড়ে তুলছে, সেমিনার করছে, বক্তব্য দিচ্ছে। এরমধ্যে শিক্ষা, সংবিধানের ধারা, রাষ্ট্রব্যবস্থা - এসব নিয়ে যতগুলো আলাপের আয়োজন চোখে পড়ছে, তার অধিকাংশই করছে সেই চেনা-পরিচিত মানুষজন; মোস্টলি প্রগতিশীল, বামপন্থী হিসেবে যারা পরিচিত, তারা। এবং সেই সাথে অল্প কিছু সেন্টার-রাইটে থাকা প্রো-ইসলামিস্ট কিছু তরুণ।

অন্যদিকে ইসলামপন্থী হিসেবে যারা পরিচিত, তাদের সেমিনারগুলো কী নিয়ে? মোস্টলি শরিয়া ব্যবস্থা, খিলাফত প্রতিষ্ঠা, ইসলামোফোবিয়া, পশ্চিমা নারীবাদের বিরোধিতা - প্রভৃতি নিয়ে। এর ব্যতিক্রমও আছে নিশ্চয়ই, কিন্তু এগুলোই প্রধান চিত্র।

দ্বিতীয় বিষয়গুলো যে অপ্রয়োজনীয়, সেটা আমি বলছি না। কিন্তু আপনি যদি শুধু সেগুলো নিয়েই থাকেন; শিক্ষাব্যবস্থা, আইনব্যবস্থা, সংবিধানব্যবস্থা নিয়ে আলাপ না করেন, সেমিনার না করেন, তাহলে ড: ইউনুস আর আসিফ নজরুল যে আপনাকে না চিনে যারা এগুলো নিয়ে আলাপ করছে, তাদেরকেই চিনবে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে? (আনফরচুনেটলি উনাদের চোখে পড়া বা পরিচিত হওয়াটা প্রধান একটা যোগ্যতা।)

ফলাফলটা কী হবে? এই ধরনের প্রথম কোনো কমিটিতেই আপনি বা আপনার পছন্দের লোকেরা স্থান পাবে না। আপনাদেরকে আন্দোলন করতে হবে, দেশ অচল করার হুমকি দিতে হবে, এরপর পূর্বের কমিটি বাতিল করে আপনাদের সাথে সমঝোতায় আসতে হবে। এটাকে অনেকের কাছে বিজয় মনে হলেও বাস্তবে এটা বিশাল পরাজয়। এর মাধ্যমে প্রতিপক্ষের সাথে শত্রুতা পাকাপোক্ত হবে, এবং পুরো বিশ্বের সামনেই নেগেটিভ ইমেজ যাবে।

সেজন্যই ইসলামপন্থীদের খিলাফত প্রতিষ্ঠা টাইপের সুদূর এবং তত্ত্বীয় বিষয়কে এই মুহূর্তে কম গুরুত্ব দিয়ে ইমিডিয়েটলি রাষ্ট্রের কাজে লাগে, এরকম বিষয়ে প্রো-অ্যাক্টিভ হওয়া প্রয়োজন। এবং এক্ষেত্রেও শুধু ইসলামপন্থীদেরকে নিয়ে পৃথক সেমিনার না করে যতদূর সম্ভব এলিট, প্রগতিশীল, বামধারার মানুষজনের সাথে মিলে ইনক্লুসিভ সেমিনারে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত।

এটা কেন জরুরী, বলি। প্রথমত, শুধু ইসলামপন্থীদের সম্মেলন হলে ইউটোপিয়ান ধ্যান-ধারণা প্রাধান্য পায়। কিন্তু যারা অলরেডি ক্ষমতায়/দায়িত্বে, তাদের সাথে আলোচনা করতে গেলে বাস্তব চিত্র সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

দ্বিতীয়ত, ডান-বামের মধ্যে যত শত্রুতা, যত ফোবিয়া, তার একটা বড় কারণ হচ্ছে এই দুই শ্রেণির মধ্যে দূরত্ব। এই দূরত্ব যত দূর হবে, দুই পক্ষের মধ্যে ইন্টারেকশন যত বেশি হবে, ভুল বোঝাবুঝি, অনর্থক আতঙ্ক তত দূর হবে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর উপর হাজার হাজার বিদেশী নিউজ আর্টিকেল এবং প্রচুর বই পড়তে গিয়ে একটা প্যাটার্ন আমি লক্ষ্য করেছি: অধিকাংশ সাংবাদিক বা লেখক, যারা টিপিক্যাল ওরিয়েন্টালিস্ট বয়ান দেয়, তাদের অধিকাংশই জীবনে ঐসব দেশে থাকেনি, ঐসব দেশের মানুষের সাথে ইন্টারেক্ট করেনি। জাস্ট লিমিটেড টাইমের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে রিপোর্ট করার জন্য গেছে।

কিন্তু যারা কয়েক বছর ধরে ঐ দেশগুলোতে ছিল, ওখানকার মানুষের সাথে মিশেছে, এরকম আমেরিকান ইহুদি-খ্রিস্টান সাংবাদিকদের কাছ থেকে আমি এত চমত্‍কার, এত সিম্প্যাথেটিক বর্ণনা পেয়েছি, যেটা অনেক মুসলমানের কাছ থেকেও পাওয়া যায় না।

কিছু মানুষ আছে, যারা কখনোই ফিরবে না। কিন্তু এর বাইরে বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটানোর জন্য, দূরত্ব কমানোর জন্য নিজেদের গন্ডি থেকে বেরিয়ে এসে তাদের সাথে মেশা প্রয়োজন। প্রো-অ্যাক্টিভ হওয়া প্রয়োজন। সরাসরি তাদের দৈনন্দিন জীবেনকে প্রভাবিত করে, এরকম বিষয়ে বাস্তবসম্মত আলোচনা তাদের সামনে উপস্থাপন করা প্রয়োজন।
ইসরায়েলি পিপল টু দেয়ার ডিফেন্স মিনিস্ট্রি:

আয়রন ডন বানাইছ ভাই, সেই হইসে!
গত নয়-দশ মাস ধরে আপনি যদি নিউজ অ্যানালাইসিস ফলো করেন, তাহলে একটা বিষয় নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারার কথা, সেটা হচ্ছে, ইসরায়েল শুরু থেকেই চেয়েছে যুদ্ধটা বিস্তৃত করতে, ইরানকে যুদ্ধে টেনে আনতে। কিন্তু ইরান তাতে সাড়া দেয় নাই, আমেরিকাও রাজি হয় নাই।

ইসরায়েল ইরানকে থ্রেট মনে করে। কেন, সেটা হেজবুল্লাহ আর হুথিদেরকে দেখলেই বোঝা যায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ইসরায়েলের একার পক্ষে সম্ভবত ইরানকে পরাজিত করা সম্ভব না। সেজন্যই তারা চায়, আমেরিকাকে দিয়ে ইরানকে শায়েস্তা করতে। কারণ আমেরিকার শক্তির সামনে বাকি বিশ্ব অসহায়।

আমেরিকা এই মুহূর্তে ইরানের সাথে বিশাল যুদ্ধ বাধাতে আগ্রহী না। কিন্তু ইরান যদি সীমা লংঘন করে, ইসরায়েলের উপর আক্রমণ করে তাদের কয়েকশো তো অনেক বড়, কয়েক ডজন সিভিলিয়ানকে হত্যা করে, তাহলেই আমেরিকার উপর যেই চাপ আসবে, তাতে ইরানের উপর সরাসরি বম্বিং করা ছাড়া আমেরিকার কোনো উপায় থাকবে না।

ইরান এই সমীকরণ খুব ভালোভাবেই জানে। এবং সেজন্যই তারা ইসরায়েলের উস্কানিগুলোর বিপরীতে, ইসরায়েল একের পর এক তাদের অনুগত বাহিনীগুলোকে ধ্বংস করার পরেও, কমান্ডারদেরকে হত্যা করার পরেও ঠিক ততটুকুই রেসপন্স করে, যতটুকু না করলেই না। আমেরিকার অতুলনীয় শক্তিমত্তার সামনে ইরান এখনও অসহায়।

এই সাম্যাবস্থার প্রমাণ সব সময়ই দেখা যায়। এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ আমরা দেখেছি গত এপ্রিলে। সে সময় ইরানের একটা জবাব দেওয়া জরুরী হয়ে পড়েছিল। কিন্তু একইসাথে তাদের ভয় ছিল, জবাব দিতে গিয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেলে যুদ্ধ নিজেদের উপর চলে আসবে।

ফলে তারা যেটা করে, আক্রমণ করে ঠিকই, কিন্তু আমেরিকাকে আগেই জানিয়ে দেয়। ইসরায়েলের পাশাপাশি আমেরিকা এবং তার মিত্ররা মিলে সব আক্রমণ ঠেকায়। কিন্তু এর ফাঁকেও একটা মিলিটারি টার্গেটে তারা ঠিকই ভালোভাবে আক্রমণ করে, যেটা ইসরায়েল ঠেকাতে ব্যর্থ হয়।

এর মাধ্যমে তারা ইসরায়েলের বড় ধরনের ক্ষতি না করেই গত পাঁচ দশকের ইতিহাসে প্রথম কোনো রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের উপর আক্রমণ করে, এবং নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দেয়। এবং আশা করে, ইসরায়েল তাতে কিছুটা ভীত হবে এবং নিজেদেরকে সংবরণ করবে।

কিন্তু বাস্তবে ইসরায়েল এসক্যালেশন চালিয়েই যেতে থাকে। গত কয়েক সপ্তায় হানিয়া এবং নাসরাল্লাহ হত্যাকাণ্ড, লেবাননে আক্রমণ - সব মিলিয়ে ইসরায়েল পরিস্থিতিকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যায়, তাতে পরিষ্কার হয়, তাদের থামার কোনো ইচ্ছা নাই। তারা চিরস্থায়ীভাবে তাদের শত্রুদেরকে নিষ্ক্রিয় করতে চায়। শুধু তাই না, গত কয়েকদিন ধরে ইসরায়েল সরাসরি ইরানের উপর আক্রমণের কথাও বলছিল।

ইরানের যে ধীরে খেলা নীতি, তাতে সাধারণ অবস্থায় এই ধরনের আক্রমণের পর এত তাড়াতাড়ি তাদের রিয়েক্ট করার কথা না। এবং তারা এটাও জানে, এবার আক্রমণ করলে সেটা গতবারের চেয়েও রিস্কি হবে। তারা জানে, এটা তাদেরকে যুদ্ধে জড়ানোর জন্য একটা ট্র্যাপ। কিন্তু হেজবুল্লাহর টপ লিডারদেরকে মেরে ফেলার পর তাদের নিজেদের ইমেজের যে ক্ষতি হয়, সেটা পুনরুদ্ধার করার জন্যই রিস্ক নিয়ে হলেও তাদেরকে গতকালের আক্রমণটা করতে হয়।

এই প্রেক্ষাপটেই গতকালের আক্রমণটাকে দেখতে হবে। এবারও ইরান রাশিয়াকে, আমেরিকাকে এবং আরব রাষ্ট্রগুলোকে আগেই জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বেশি আগে না। অল্প একটু আগে। এবং সেজন্যই এবার গতবারের তুলনায় ডাইরেক্ট হিট অনেক বেশি হয়েছে।

আগে কেন জানাতে হয়? এটা লিমিটেড যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজি। ম্যাসেজ দেওয়ার জন্য যে, আমরা ফুল স্কেল যুদ্ধ চা্চ্ছি না। সোজা কথায়, তোমরা এটাকে ফুল স্কেল যুদ্ধ মনে করে আমাদের উপর নিউক্লিয়ার বোমা মেরে দিও না। আমরা লিমিটেড অ্যাটাক করছি, কিন্তু তোমরা যদি পাল্টা আক্রমণ করো, তাহলে আমরা আরও আক্রমণ করব। যেমন ইরান আমেরিকাকে এবং আরব রাষ্ট্রগুলোকে হুমকি দিয়েছে, ইসরায়েল বা আমেরিকা যদি ইরানের অয়েল রিফাইনারিগুলোতে আক্রমণ করে, তাহলে তারা পাল্টা আমেরিকার মিত্র আরব রাষ্ট্রের তেলক্ষেত্রগুলোতে আক্রমণ করবে।

ইরানের এবারের আক্রমণটার ফলাফল কী হয়েছে? পরিষ্কার না। কারণ টাইমস অফ ইসরায়েলের রিপোর্ট অনুযায়ী, ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ এবং ছবি প্রকাশ করার ব্যাপারে সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সেজন্য প্রকৃত সত্য হয়তো কখনোই জানা যাবে না। ইসরায়েল অফিশিয়ালি বলছে, কোনো মৃত্যু বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু আল-জাজিরার রিপোর্টার বলেছে, সে আনঅফিশিয়ালে হসপিটালে দুইজন আহতের ভর্তি হওয়ার সংবাদ জানতে পেরেছে।

ইরানের সাথে ইসরায়েলের যে ভৌগলিক দূরত্ব, প্রায় ২০০০+ কিলোমিটার, এই দূরত্ব অতিক্রম করতে মিসাইলগুলোর যে সময় লাগে, তাতে ইরান থেকে আক্রমণ করে ইসরায়েলের উল্লেখযোগ্য প্রাণহানি ঘটানো আসলে কখনোই সম্ভব না।

ইসরায়েল মোটামুটি এক ঘণ্টা আগেই টের পেয়ে যায়, সাইরেন বাজিয়ে দেয়, এবং লোকজনকে শেল্টারে আশ্রয় নিতে নির্দেশ দেয়। ফলে হতাহত যদি কেউ হয়, সেটা পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদেরই হওয়ার শঙ্কা থাকে, যাদেরকে ওয়ার্নিংও দেওয়া হয় না, যাদের শেল্টারও নাই। গতকালও সেটাই হয়েছে। একজন ফিলিস্তিনি মারা গিয়েছে।
একইসাথে এটাও সত্য, ইরান দুই-একটা বিচ্ছিন্ন মিসাইল বাদে মূলত মিলিটারি সাইটগুলোই টার্গেট করেছে। এবং সেটাও করেছে রাতের বেলা, যেন সিভিলিয়ান ক্যাজুয়ালিটি না হয়। কয়েক ডজন ইসরায়েলি সিভিলিয়ানকে হত্যা করে নিজের উপর যুদ্ধ টেনে এনে নিজের ধ্বংস ডাকতে ইরান চায়নি। ইরান যেটা চেয়েছে, সেটা হচ্ছে, মিলিটারি সাইটগুলোর ক্ষয়ক্ষতি করা এবং দেখানো যে, তাদের এরচেয়েও বেশি ক্ষয়ক্ষতি করার সক্ষমতা আছে। সেটাতে তারা কতটুকু সফল হয়েছে, এয়ারবেজগুলোর এবং এফ-৩৫ বিমানগুলোর আসলে কতটুকু ক্ষতি করতে পেরেছে, এখনও পর্যন্ত পরিষ্কার না।

এই হামলার ফলাফল কী হবে? ইসরায়েল পাল্টা হামলা করবে। এবং মনে হচ্ছে, এই হামলা এপ্রিলের মতো লোক দেখানো না হয়ে সম্ভবত আরেকটু বেশি হবে। অন্তত আমেরিকার প্রতিক্রিয়া দেখে সেরকমই মনে হচ্ছে। এপ্রিলে ইরানের আক্রমণের পর আমেরিকার যে ভাষা ছিল, এবার জ্যাক সুলিভানের ভাষা আরও কড়া, আরও আক্রমণাত্মক।

যদি খুব বেশি পাল্টাপাল্টি আক্রমণ পর্যন্ত না গড়ায়, তাহলেও গতকালের এই আক্রমণ যে গাযাবাসীকে সামান্য একটু স্বস্তি দিয়েছিল, শরণার্থী শিবির থেকে বেরিয়ে তারা যে সাময়িক উল্লাস প্রকাশ করার উপলক্ষ পেয়েছিল, এজন্যও এই আক্রমণটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ChatGPT-কে সকালবেলার পোস্টটা দিয়ে বললাম : "Could you review the following analysis and assess its accuracy? Are there any points where leading geopolitical or military analysts might disagree?"

সে এই উত্তর দিলো:

এই বিশ্লেষণটি বেশ তথ্যবহুল এবং বিভিন্ন উপাদানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এতে ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ক, তাদের সামরিক ক্ষমতা, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অবস্থানের বিষয়গুলি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তবে এতে কিছু জায়গায় বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে, বিশেষ করে ইরানের প্রতিক্রিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে।

মূল বিষয় এবং কোথায় ভিন্নমত থাকতে পারে:

1. ইসরায়েল ও ইরানকে যুদ্ধে টেনে আনার চেষ্টা:

ইসরায়েলের ইরানকে যুদ্ধে টেনে আনার ইচ্ছা নিয়ে অনেক বিশ্লেষক একমত, বিশেষ করে যখন ইরান তার আঞ্চলিক প্রভাব (হেজবুল্লাহ, হুথিদের মাধ্যমে) বিস্তৃত করছে। তবে, কিছু বিশ্লেষক মনে করেন যে ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য ইরানের সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ নয়, বরং তাদের প্রভাব ও সামরিক সক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করা।

2. আমেরিকার যুদ্ধ-প্রবণতা:

বিশ্লেষণে বলা হয়েছে যে আমেরিকা ইরানের সঙ্গে বড় আকারের যুদ্ধ বাধাতে অনাগ্রহী। এটি সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে, কারণ বাইডেন প্রশাসন ইরানের সঙ্গে চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে। তবে কিছু বিশ্লেষক যুক্তি দেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং ইসরায়েলকে প্রতিরক্ষা সরবরাহ দিয়ে যাচ্ছে।

3. ইরানের সীমিত প্রতিক্রিয়া:

ইরানের ‘ধীরে খেলার নীতি’ সম্পর্কে বলা হয়েছে, যা মূলত সত্য। ইরান সামরিকভাবে সাবধানী, তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করেন যে ইরানের এই কৌশল আসলে তাদের সামর্থ্যকে ভুলভাবে মূল্যায়ন করতে প্ররোচিত করতে পারে। ইরান তাদের প্রতিশ্রুত সামরিক শক্তি দিয়ে ইসরায়েলকে ভীত করার চেষ্টা করে, কিন্তু ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারণে এই হুমকিগুলো সফলভাবে প্রতিরোধ করা হচ্ছে।

4. ইরান-ইসরায়েল আক্রমণের ফলাফল:

ইরানের সাম্প্রতিক হামলার সাফল্য নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দক্ষতা এবং ইরানের মিসাইল ক্ষমতা নিয়ে সমালোচকরা প্রশ্ন তোলেন। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে যে ইরান কতটা সফলভাবে ইসরায়েলি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে, বিশেষত ইসরায়েলের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের কারণে।

5. আমেরিকার প্রতিক্রিয়া:

বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে যে আমেরিকা ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, মার্কিন প্রতিক্রিয়া এখনও "মেজর এস্কালেশন" বা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে যায়নি। মার্কিন প্রশাসন আরও কৌশলগতভাবে জটিল কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজছে।

সংক্ষেপে:

এই বিশ্লেষণ বেশিরভাগই সঠিক, তবে বিভিন্ন ভিন্নমত রয়েছে বিশেষ করে ইরানের সামরিক কার্যকলাপ এবং আমেরিকার ভূমিকাকে ঘিরে। সবচেয়ে বড় বিতর্ক ইরানের সামরিক সাফল্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদী কৌশল নিয়ে।
আপনার কাছে যদি মনে হয় গত ১৫ বছরে দেশে বাল্কায়েদা সমর্থকদের সংখ্যা বেড়ে গেছে, তাহলে এর জন্য আপনার যাদেরকে ক্রেডিট দেওয়া উচিত, তারা হচ্ছে আওয়ামী লীগ, ১৪ দলীয় জোট, বাম-সুশীল বুদ্ধিজীবি, জাফর ইকবাল, শাহরিয়ার কবির এট অল ...

দেখেন, যেকোনো দেশে যখন ইসলামপন্থীদের স্বাভাবিক রাজনীতি করার অধিকার থাকবে না, সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক ইসলামিক দলকে ভার্চুয়ালি নিষিদ্ধ করে রাখা হবে, তাদের সদস্য সন্দেহে পেটানো হবে, সেই দেশের যুবকরা উগ্রপন্থী দলগুলোর রাজনীতিতেই যোগ দিবে। এটা যুগ যুগ ধরেই বিভিন্ন দেশে হয়ে এসেছে।

লিবিয়া-সিরিয়াতে মুসলিম ব্রাদারহুড নিষিদ্ধ ছিল। লিবিয়াতে ইভেন দাড়ি রাখা পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল, ইসলামিক বৈঠক করা নিষিদ্ধ ছিল, তিউনিসিয়ায় মসজিদে জামাতে নামাজ পড়লে পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো। ফলাফল কী হয়েছে? ১৪/১৫ সালে ইরাক-সিরিয়াতে সবচেয়ে বেশি যুবক গেছে লিবিয়া আর তিউনিসিয়া থেকে।

বিপরীতে মিসরের অবস্থা দেখেন। ষাটের দশকে এবং এরপর সত্তরের দশকের শেষের দিকে সেখানে মুসলিম ব্রাদারহুড নিষিদ্ধ থাকায় আশির দশকে তাদের অনেকে আফগানিস্তানে গিয়েছিল; কিন্তু মোবারকের আমলে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায়, তাদের সীমিতভাবে রাজনীতি করার সুযোগ থাকায় ১৪/১৫ সালে তাদের কাউকে ইরাক-সিরিয়াতে যেতে দেখা যায়নি।

এটাই হওয়ার কথা। তরুণদের একটা অংশ সব সময়ই ইসলামিক মুভমেন্টগুলোর দিকে আকৃষ্ট হবে। যদি গণতান্ত্রিকভাবে কোনো দলে যোগ দেওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে তাদের একটা বড় অংশ সেদিকেই ঝুঁকবে। দলগুলোও প্রকাশ্যেই নিজেদের আইডিওলজি, ভিশন অফার করে তাদেরকে রিক্রুট করতে পারবে।

কিন্তু যখন এই সুযোগ থাকবে না, যখন এই দলগুলোর উপর দমন-নিপীড়ন চলবে, তখন এই তরুণরা গোপনে, অনলাইনে আকীদার বড়ভাইদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে গোপন, নিষিদ্ধ, উগ্রপন্থী বিভিন্ন দলের দিকে ঝুঁকবে। বাংলাদেশেও অনেকের ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে।

এটা থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে সমাজে ইসলামবিদ্বেষ হ্রাস করা। কোনো ধরনের ইসলামিক গ্রুপের উপর দমন-নিপীড়ন না করা। ইভেন সন্দেহজনক গ্রুপগুলোর উপরেও না। যতক্ষণ পর্যন্ত না আসলেই তাদের আইনগত কোনো অপরাধ পাওয়া যায়।

ধরেন এই যে বাল্কায়েদা সদৃশ পতাকা নিয়ে অনেকে মিছিল করছে, আমার মতে এটাতে কোনো কল্যাণ তো নাই-ই, বরং নেগেটিভ প্রপাগান্ডার কারণে ক্ষতির সম্ভাবনা আছে; কিন্তু তারপরেও এটার বিরুদ্ধে যেন শুধু সমালোচনাই থাকে। যেন জাস্ট পতাকা নিয়ে মিছিল করার কারণে কাউকে আটক করা না হয়, তুলে নিয়ে যাওয়া না হয়।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অবশ্যই উচিত এসব ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া - এদের পেছনে সন্দেহজনক কারও ইন্ধন আছে কি না, কোনো স্যাবোটাজের পরিকল্পনা আছে কি না, এসব বিষয়ে তদন্ত করা। কিন্তু কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগ পর্যন্ত, বা নিশ্চিত কোনো পরিকল্পনা না পাওয়া পর্যন্ত যেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হয়।

সমাজে যদি আইনের শাসন নিশ্চিত থাকে, কাউকে গোপনে কিছু করতে না হয়, যদি গণতান্ত্রিকভাবেই ইসলামিক দলের রাজনীতি করে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ খোলা থাকে, তাহলে দিন শেষে এই ধরনের গ্রুপ খুব বেশি পাত্তা পাবে না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য এবং এই রাষ্ট্রের মুসলমানদের জন্য সেটাই তুলনামূলক বেটার সল্যুশন।
একটা ঘোষণা।

আমার অডিবল অ্যাকাউন্টে ৬ মাসের ক্রেডিট, অর্থাৎ ছয়টা অডিওবুক কেনার মতো টাকা আছে।

অ্যাকাউন্টটা আগামী সপ্তায় বন্ধ করে দিবো। কারো যদি অডিবল থেকে অডিও বই কেনার দরকার থাকে, তাহলে যোগাযোগ করতে পারেন। কম প্রাইসে দিবো।
কাকতালীয়ভাবে আজকে বিকেলেই এই বইটা পড়ছিলাম। অন্যান্য দেশে বিস্তারের অনেক আগে সেই ২০০৯ সালেই গাযায় এইসব সালাফি-জিহাদিরা "ইমারাত" প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। হামাস শুরুতেই এই আপদ বুঝতে পারে এবং ঝেঁটিয়ে তাদেরকে বিদায় করে।

হামাস বিভিন্ন ইসলামিক গ্রুপের সাথে একসাথে কাজ করেছে। তারা এমনকি বামপন্থী মার্ক্সিস্ট-লিনিনিস্ট গ্রুপগুলোর সাথে মিলেও জয়েন্ট অপারেশন রুম তৈরি করেছে। কিন্তু বিপুল জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও তারা নিজেরাও খেলাফত কায়েম করে নাই, শরিয়া প্রতিষ্ঠা করে নাই, এবং বাল্কায়েদার প্রতি অনুগত কোনো গ্রুপকেও স্পেস দেয় নাই।

প্রজ্ঞা জিনিসটা এমনি এমনি আসে না। দশকের পর দশক ধরে সংগ্রাম করার, রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে আসে।
"কালিমা" খচিত পতাকা নিয়ে কিছু বলা যাবে না - হিযবুত তাহরির আর বাল্কায়েদা সমর্থকদের এই লজিকের সুযোগে এবার আইসিসের পতাকা নিয়েও মিছিল হয়েছে।

এখন সবই হবে। কিছুই বলা যাবে না। কিন্তু পরে যখন পুরা দুনিয়া মিলে বাঁশ দিবে, তখন ঠিকই "ওগুলো তো সব ইহুদি-খ্রিস্টানদের ষড়যন্ত্র ছিল" বলে দায় এড়ানো যাবে।
নিউজটা দুই-তিন দিন আগের। অনেকেই দেখেছেন হয়তো। আহমাদিনেজাদ দাবি করেছেন, ইরানের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স বিভাগের ইসরায়েল শাখার যে প্রধান, সে-সহ সেই ইউনিটের ২০ জনই ছিল আসলে ইসরায়েলের ডাবল এজেন্ট।

আহমাদিনেজাদের দাবি অনুযায়ী, ২০১৮ সালে তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচী সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু ডকুমেন্ট চুরি করে ইসরায়েলের হাতে তুলে দেয়, এবং এরফলেই ট্রাম্প ইরানের সাথে চুক্তি বাতিল করে। এবং সবকিছু সফলভাবে সম্পন্ন করার পর তারা পালিয়েও যেতে সক্ষম হয়।

সত্য হলে এটা হতে পারে কোল্ড ওয়ারের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম সেরা ডাবল ক্রস অপারেশন। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং এরপর স্নায়ুযুদ্ধের সময় এরকম ডজন ডজন ঘটনা ঘটেছিল। দেখা গেছে আমেরিকার কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা আসলে সোভিয়েত এজন্ট। অথবা ভাইসা ভার্সা।

আমার "স্পাই স্টোরিজ ২" বইয়ে স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের এরকম দুর্ধর্ষ এক ডাবল এজেন্টের কাহিনী বলা হয়েছে। এই ধরনের বিষয়ে আগ্রহী হলে পড়ে দেখতে পারেন।
আগামীকাল ১ম বর্ষপূর্তি।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে ফিলিস্তিনিরা হেরে গেছে, গাযা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে, দ্বিতীয় নাকবা প্রায় সফল হয়ে গেছে; কিন্তু বাস্তবে এখনও যুদ্ধ শেষ হয়নি, বরং বিস্তৃত হয়েছে।

ওদের আল্ট্রা-রাইট যেদিকে যাচ্ছিল, বিশ্বরাজনীতি যেদিকে যাচ্ছিল, ৭ অক্টোবর না হলে ধীরে ধীরে ফিলিস্তিন ইস্যুটাই নন-ইস্যু হয়ে যেত। পশ্চিম তীরের অর্ধেককে অ্যানেক্স করে নেওয়া হতো, বাকি অর্ধেককে একাধিক গাযায় রূপান্তরিত করা হতো, এবং একপর্যায়ে আকসা ভেঙে ফেলা হতো।

এখনও সেই প্রক্রিয়া থামানো যায়নি; কিন্তু এই সঙ্কটের একটা সল্যুশন যে জরুরী, সেই আলোচনাটা আবার ফিরে এসেছে। আমাদের এক জেনারেশনের জন্য এক বছর খুবই কম সময়, তাই আমাদেরকে সহজেই হতাশা ঘিরে ধরে। কিন্তু ফিলিস্তিন যুদ্ধ চলছে ১০৭ বছর ধরে। দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল বোঝার জন্য তাই এক বছর যথেষ্ট সময় না।

এই দিনের এই বিদ্রোহের ফলে, উন্মুক্ত কারাগার ভেঙে বন্দীদের বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টার ফলে যে অকল্পনীয় ত্যাগ তারা স্বীকার করেছে, তার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবেই হয়তো একদিন বিজয় আসবে। এটুকু স্বপ্ন আমাদেরকে দেখতেই হবে।

ছবি © ইয়েমেনি কার্টুনিস্ট কামাল শারাফ